mdsaker Subscriber 2 years ago |
আনাস বিন মালেক বলেনঃ আবু তালহা (রাঃ) তাঁর একটি অসুস্থ পুত্র সন্তান বাড়িতে রেখে বাইরে (সফরে) গেলেন। সফরে যাওয়ার পর সন্তানটি মারা গেল। আবু তালহা তখনও বাইরে ছিলেন। আবু তালহার স্ত্রী উম্মে সুলাইম তার পরিবারের লোকদেরকে বললেনঃ আবু তালহা ফেরত আসলে তোমরা তাকে পুত্রের মৃত্যু সংবাদ জনাবে না। আমিই প্রথমে তাকে সংবাদটি জানাবো।
আবু তালহা বাড়িতে আসলে তিনি তার জন্য রাতের খাবার পরিবেশন করলেন। অতঃপর পূর্বের চেয়ে আরও সুন্দর করে আবু তালহার জন্য সাজ-সজ্জা গ্রহণ করলেন। তারা রাত্রে সহবাসে মিলিত হলেন। তিনি যখন দেখলেন, তার স্বামী পরিতৃপ্ত হয়েছেন তখন বলতে লাগলেনঃ হে আবু তালহা! লোকেরা যদি অন্য লোকদের কাছে কোন জিনিষ আমানত রাখে, আর পরবর্তীতে যদি তারা জিনিষটি ফেরত চায়, তাহলে কি তারা তা আটকিয়ে রাখার অধিকার রাখেন? আবু তালহা বললেনঃ না, আটকিয়ে রাখার কোন অধিকার তারা রাখেন না। এবার আবু তালহার স্ত্রী বললেনঃ আপনি সবুর করুন। আপনার ছেলেটি মারা গেছে। এতে আবু তালহা রাগান্বিত হয়ে বললেনঃ তুমি আমাকে আগে সংবাদ দাও নি কেন? আর এখন আমি ময়লা-আবর্জনায় অপিবত্র হয়ে যাওয়ার পর সংবাদ দিচ্ছ?
এরপর আবু তালহা সরাসরি রাসূল (সাঃ)এর দরবারে গিয়ে হাজির হলেন এবং রাতের ঘটনা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানিয়ে দিলেন। তিনি তখন বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য এ রাত্রিতে বরকত দান করবেন।
অন্য বর্ণনায় এসেছে উম্মে সুলাইম ছেলেকে গোসল দিয়ে কাফন পরিয়ে ঘরের এক পাশে রেখে দিলেন। আবু তালহা ঘরে এসে জিজ্ঞেস করলেনঃ ছেলেটি কোথায়? উম্মে সুলাইম বললেনঃ সে বিশ্রাম করছে। আমার মনে হয় সে আরামে ঘুমাচ্ছে।
আবু তালহা ভাবলেনঃ তাঁর স্ত্রী সত্য কথাই বলছেন। আবু তালহা রাত্রি যাপন করলেন। সকাল হলে তিনি গোসল করলেন। যখন তিনি বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন তখন তাঁর স্ত্রী তাঁকে জানালেন যে, ছেলেটি মারা গেছে। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সাথে ফজরের নামায আদায় করলেন। অতঃপর তাঁকে তাদের উভয়ের সংবাদ শুনালেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য এ রাত্রিতে বরকত দান করবেন। সেই রাত্রির সহবাসে উম্মে সুলাইম গর্ভবতী হয়ে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন।
আনাস (রাঃ) বলেনঃ আবু তালহা আমাকে বললেনঃ সন্তানটিকে বহন করে তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে যাও। আর আবু তালহা সাথে কয়েকটি খেজুর দিয়ে দিলেন। রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ সাথে কিছু আছে কি? তিনি বললেনঃ কয়েকটি খেজুর আছে। নবী (সাঃ) সেই খেজুরগুলো চিবিয়ে তাঁর পবিত্র মুখ থেকে কিছু বের করে শিশুটির মুখে রাখলেন। অতঃপর তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ। জনৈক আনসারী সাহাবী বলেনঃ আমি আবু তালহার নয়জন সন্তান দেখেছি। তারা প্রত্যেকেই কুরআনের হাফেজ হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম)
এই ঘটনায় আমাদের জন্য যে সমস্ত শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে তার মধ্যেঃ
১) আবু তালহার স্ত্রী উম্মে সুলাইমের ফজীলত ও তাঁর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া গেল।
২) তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং বিপদাপদে পেরেশান হয়ে উচ্চস্বরে ক্রন্দন না করে ধৈর্য ধারণ করা।
৩) তারা সেই রাত্রে যেই ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছিলেন তার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা পরবর্তীতে তাদেরকে নেক সন্তান দান করেছিলেন। যারা কুরআনের হাফেয হয়েছিল।
৪) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর দরবারে যে দুআ করতেন, তা কবুল হয়ে যেত।
৫) আমানত বা গচ্ছিত রাখা বস্তু তার মালিকের নিকট ফেরত দেয়া ওয়াজিব।
৬) জন্ম গ্রহণ করার পর পরই শিশুর মুখে খেজুর চিবিয়ে তার রস দেয়া মুস্তাহাব।
৭) ইসলাম নবজাত শিশুর প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করতে উৎসাহ দিয়েছে।
৮) মুসলিম মহিলার উচিত তার স্বামীর জন্য সাজ-সজ্জা গ্রহণ করা। বিশেষ করে স্বামী বিদেশ বা সফর থেকে ফেরত এসে প্রথম সাক্ষাতের সময়।
৯) জন্মের সাথে সাথেই শিশুর জন্য সুন্দর একটি নাম নির্বাচন মুস্তাহাব। আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রাহমান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম।
১০) নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখের থুথু, লালা এবং তাঁর পবিত্র শরীরের সাথে লেগেছে এমন বস্তু দিয়ে বরকত গ্রহণ করা জায়েয ছিল। কিন্তু নবী (সাঃ)এর পর অন্য কোন সৎ লোক, আলেম বা পীর-ফকীরের আছার বা উচ্ছিষ্ট বস্তু দিয়ে বরকত লওয়া জায়েয নেই। তার কারণঃ
ক) এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে খাস (নির্দিষ্ট) ছিল।
খ) রাসূল (সাঃ)এর যাত বা ব্যক্তি সত্বা বরকতময় ছিল। তা অহীর মাধ্যমে জানা গেছে। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে তা জানা যায় নি।
গ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারা যাওয়ার পর সম্মানিত সাহবীগণ থেকে কেউ বরকত নিতে চেষ্টা করেন নি। করে থাকলে অবশ্যই তা বর্ণিত হত।
ঘ) এতে সৎ লোকদেরকে নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা তাদের এবাদত পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। বাস্তবে তাই হয়েছে।
Alert message goes here